গত ১৬ জুলাই ২০২০ তারিখ রাত অনুমান ২১.৩০ ঘটিকার দিকে গাজীপুর মহানগরীর ন্যাশনাল পার্ক এলাকা হইতে ভিকটিম মোঃ আমিনুল ইসলাম(৩৫), পিতা-মোঃ তোবু সরকার, সাং-ডিহিডওর, থানা-গাবতলী, জেলা-বগুড়া, এ/পি-সাং-গজারিয়াপাড়া, থানা-সদর, জিএমপি, গাজীপুর অপহৃত হয়। অপহৃত হওয়ার পর ভিকটিমের পরিবার সম্ভাব্য সকল স্থানে খোঁজাখোজি করে না পেয়ে এই সংক্রান্তে গাজীপুর মহানগরীর সদর থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন। অপহরণের পর অপহরণকারীরা ভিকটিমের মোবাইল ফোন থেকে ভিকটিমের পরিবারকে ফোন দিয়ে অপহরণের বিষয় জানায় এবং তার মুক্তিপণ হিসেবে ০৩ লক্ষ টাকা দাবি করে। অন্যথায় অপহরণকারীরা ভিকটিমকে হত্যা করে লাশ গুম করবে বলে জানায়। পরবর্তীতে খোঁজাখোজির এক পর্যায়ে গত ১৮ জুলাই ২০২০ ইং তারিখ ভিকটিমের পরিবার র্যাব-১, স্পেশালাইজড কোম্পানী, পোড়াবাড়ী ক্যাম্প, গাজীপুর এসে অপহৃত ভিকটিমের মুক্তির জন্য আইনগত সাহায্য কামনা করে। অভিযোগ প্রাপ্ত হওয়ার পর অপহৃত ভিকটিম উদ্ধার এবং অপহরণকারীদের গ্রেফতারের লক্ষ্যে র্যাব-১, স্পেশালাইজড কোম্পানী, পোড়াবাড়ী ক্যাম্প কমান্ডার লেঃ কমান্ডার আব্দুল্লাহ আল-মামুন, (জি), বিএন ছায়া তদন্ত শুরু করেন এবং র্যাবের সোর্স নিয়োগসহ সকল ধরনের গোয়েন্দা কার্যক্রম পরিচালনা করে আসিতেছিল।
এরই ধারাবাহিকতায়ঃ গত ১৯ জুলাই ২০২০ তারিখ অনুমান ১৯.৩০ ঘটিকার সময় র্যাব-১, স্পেশালাইজড কোম্পানী, পোড়াবাড়ী ক্যাম্প, গাজীপুর এর একটি আভিযানিক দল গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানতে পারে যে, উক্ত অপহরণকারীরা গাজীপুর মহানগরীর সদর থানাধীন সালনা বাজার এলাকায় অবস্থান করিতেছে। উক্ত সংবাদের ভিত্তিতে লেঃ কর্ণেল শাফী উল্লাহ বুলবুল, অধিনায়ক র্যাব-১ এর দিক নিদের্শনায় অত্র কোম্পানীর কোম্পানী কমান্ডার লেঃ কমান্ডার আব্দুল্লাহ আল মামুন, (জি), বিএন এর নেতৃত্বে সঙ্গীয় অফিসার/ফোর্স সহ গাজীপুর মহানগরীর সদর থানার সালনা বাজার এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে অপহরণকারী চক্রের অন্যতম মূলহোতা আসামী (১) মোঃ আমান উল্লাহ(৪৮), পিতা-মৃত শহিদ মিয়া, মাতা-মোসাঃ শাহেরা বেগম, সাং-কাদুর, থানা-নবীনগর, জেলা-বি বাড়িয়া, এ/পি-সাং-দেশিপাড়া (মনির এর বাসার ভাড়াটিয়া), থানা-সদর, জিএমপি, গাজীপুর, (২) মোঃ জহিরুল ইসলাম(৩০), পিতা-মৃত দুলু মিয়া, মাতা-জরিনা বেগম, সাং-হাসিয়ালকান্দি, থানা-শাঘাটা, জেলা-গাইবান্ধা, এ/পি-সাং-নয়নপুর (মিলন এর বাসার ভাড়াটিয়া), থানা-জয়দেবপুর, জেলা-গাজীপুর দেরকে আটক করে এবং তাদের দখল হতে ভিকটিমের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনসহ মোট ০৪টি মোবাইল ফোন এবং অজ্ঞান কাজে ব্যবহৃত ০২ পুরিয়া মেডিসিন উদ্ধার করা হয়। ধৃত আসামীদের দেয়া তথ্যমতে গাজীপুর মহানগরীর সালনা ব্রীজের উত্তর পাশে ময়মনসিংহ-ঢাকা মহাসড়কের উপর হইতে অজ্ঞান অবস্থায় ভিকটিমকে উদ্ধার করা হয়। গ্রেফতারকৃত আসামীদের জিজ্ঞাসাবাদে তারা পলাতক আসামীদের সহযোগীতায় এই অপহরণ করিয়াছে বলিয়া স্বীকার করে।
ঘটনার বর্ণনাঃ ধৃত আসামীদের ভাষ্যমতে, তারা পেশায় গার্মেন্টস কর্মী। ধৃত আসামী ও তাদের সহযোগী পলাতক আসামীরা মিলে দীর্ঘদিন যাবৎ গাজীপুরের বিভিন্ন এলাকায় বাসা ভাড়া থেকে গার্মেন্টসে চাকুরীর আড়ালে গাজীপুর জেলার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ জনবহুল এলাকা হইতে নেশা জাতীয় দ্রব্য সেবন করিয়ে সু-কৌশলে নিয়মিত অপহরণ করিয়া ভিকটিমদের আটক করিয়া বিভিন্ন শারীরিক নির্যাতনসহ খুন করিবার হুমকি দিয়ে মুক্তিপন আদায় করিয়া আসিতেছে। গত ১৬/০৭/২০২০ তারিখ ভিকটিম মোঃ আমিনুল ইসলাম(৩৫) তার গ্রামের বাড়ী বগুড়ায় যাওয়ার উদ্দেশ্যে ন্যাশনাল পার্কের সামনে গাড়ীর জন্য অপেক্ষা করিলে তখন হঠাৎ অপহরণকারীরা কৌশলে তাকে নেশা জাতীয় দ্রব্য সেবন করিয়ে জোরপূর্বক অপহরণ করিয়া অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে আটক করিয়া রেখে ভীষণ ভাবে শারীরিক নির্যাতন করে এবং পরদিন ভিকটিমের মোবাইল ফোন থেকে কল করিয়া তার পরিবারের কাছে অপহরণের বিষয়টি জানায় এবং তার মুক্তিপন হিসেবে ৩,০০,০০০/-(তিন লক্ষ) টাকা দাবি করে। অন্যথায় তাকে খুন করিয়া লাশ গুম করার হুমকি দেয়। আসামীদ্বয়কে আটকের পর র্যাবের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ধৃত আসামীরা উক্ত অপহরণের ঘটনায় সরাসরি জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে এবং ঘটনার মর্মান্তিক বর্ণনা দেয় এবং তাদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে ভিকটিম মোঃ আমিনুল ইসলাম(৩৫) কে অজ্ঞান অবস্থায় উদ্ধার করা হয়।
র্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে আটককৃত আসামীরা আরো জানা যায় যে, এই অপহরণ চক্রের মূল পরিকল্পনাকারী মোঃ মিলন এবং রফিকুল পলাতক রয়েছে এবং এরা অস্ত্রধারী ও গাজীপুর এলাকার পেশাদার অপহরণকারী চক্রের নের্তৃত্ব দেয়। তাদের পরিকল্পনা মোতাবেক দীর্ঘদিন যাবৎ এই চক্র গাজীপুরের বিভিন্ন স্থানে একাধিক অপহরণসহ ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে ডাকাতি করিয়া আসিতেছে। অপহরণ ও ডাকাতি করে ভিকটিমদের পরিবারের কাছ থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে আটককৃত আসামীরা স্বীকার করে। অপহরণ সর্ম্পকিত ভিকটিমদের পরিবার মুক্তিপন দিয়ে ভিকটিমদের ছাড়িয়ে নেওয়ার পর আইনী জটিলতায় জড়াতে চায় না, ফলে এই সব পেশাদার অপহরণ চক্রের বিরুদ্ধে মামলা হয় না।